

ভ্রমণে যাওয়ার আনন্দই আলাদা। তবে অনেক সময় বেশি পরিকল্পনা করে ফেলা হয়। কোথায় যাব, কী খাব, কোন রেস্তোরাঁয় বুকিং করব, কোনো দর্শনীয় স্থান বাদ যাবে না— এসব ভেবে ভ্রমণটাই ক্লান্তিকর হয়ে যায়।
এমনকি ভ্রমণ শেষে বাড়ি ফিরে মনে করেন এখন আবার ছুটি দরকার, আগের ক্লান্তি কাটানোর জন্য।
এই সমস্যার একটি সমাধান ধীরে ভ্রমণ বা ‘স্লো ট্রাভল’। এই ধরনের ভ্রমণের মূল উদ্দেশ্য হল- তাড়াহুড়ো না করে, এক জায়গায় থেকে গভীরভাবে সেই স্থান অনুভব করা।
ধীরে ভ্রমণ বলতে যা বোঝায়
ধীরে ভ্রমণ মানে হল পরিকল্পনা থেকে গতি কিছুটা কমিয়ে আনা। পর্যটনকেন্দ্রের তালিকা হাতে নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করার বদলে, একটি শহর বা অঞ্চলে কিছুটা বেশি সময় কাটানো, অলস বিকেল পার্কে বসে মানুষ দেখা কিংবা কেবল হাঁটতে হাঁটতে নতুন রাস্তা আবিষ্কার করাও হতে পারে ধীরে ভ্রমণের অংশ।
‘কামডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এভাবেই ব্যাখ্যা করেন মার্কিন মনোবিদ ডা. ক্রিস মওসুনিক।
এটি হল পরিমাণের বদলে গুণগত মানকে অগ্রাধিকার দেওয়া। কম জায়গা দেখা হলেও প্রতিটি জায়গাকে মন দিয়ে উপভোগ করা।
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
ধীরে ভ্রমণের পাঁচটি বড় উপকারিতা
ভ্রমণের পর ক্লান্ত হয়ে পড়া অচেনা কিছু নয়। তবে ধীরে ভ্রমণ করলে এই ক্লান্তি অনেকটাই কমে যায়। এর পাশাপাশি আরও কয়েকটি উপকার পাওয়া যায়—
স্নায়ু প্রশান্ত করে: বারবার চলাফেরা শরীরকে সবসময় উত্তেজিত রাখে। ধীরে ভ্রমণ সেই উত্তেজনা কমিয়ে মন ও শরীরকে আরাম দেয়।
ভেতরে শিকড় গাঁথার অনুভূতি জাগায়: শুধু দর্শনীয় স্থান ঘুরে নয়, বরং ছোট ছোট খুঁটিনাটি জিনিস— সূর্যের আলো, বাতাসের গন্ধ, রেস্তোরাঁর খাবারের সুবাস— এসব অনুভব করা যায়।
সম্পর্ক গড়ে তোলে: একই জায়গায় বেশি সময় কাটালে পরিবার, বন্ধু কিংবা সহযাত্রীদের সঙ্গে গভীর আলাপচারিতা ও সময় কাটানো যায়।
পরিবেশবান্ধব: কম ফ্লাইট, কম গাড়ি, কম ট্রেন মানে কার্বন নিঃসরণও কম। এছাড়া হোটেল বা বাসস্থানের বারবার পরিবর্তন না করলে পানি ও বিদ্যুতের ব্যবহারও কমে।
আনন্দ বাড়ায়: যখন সবকিছু করতে যাওয়ার চাপ থাকে না, তখনই অপ্রত্যাশিত সৌন্দর্য বা আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়।
সবার জন্য কি ধীরে ভ্রমণ উপযুক্ত?
যাদের ছুটির সময় সীমিত, বাজেট কম, আর একসাথে অনেক কিছু দেখতে চান— তাদের জন্য হয়ত এই ভ্রমণ-পদ্ধতি সুবিধাজনক নয়।
তবে যারা ভ্রমণকে শুধু জায়গা দেখা নয়, বরং গভীরভাবে অনুভব করতে চান, তাদের জন্য এটি দারুণ এক অভিজ্ঞতা হতে পারে।
যদি পুরো ভ্রমণ ধীর গতিতে রাখা সম্ভব নাও হয়, তবুও কিছু সময়কে ধীর গতির জন্য রেখে দেওয়া যায়।
যেমন— একটি সকালে কেবল হাঁটতে বের হওয়া, কোনো বাজারে গিয়ে আলাপ করা, কিংবা কর্মসূত্রে ভ্রমণের মাঝেও অর্ধেক দিন ‘স্ক্রিন’ ছেড়ে শহর দেখা।
ধীরে ভ্রমণকে বাস্তবে আনার ৯টি উপায়
ভ্রমণকে আরামদায়ক ও সুখকর করার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা যায়।
একটিমাত্র থাকার স্থান বেছে নেওয়া
প্রতিদিন হোটেল পাল্টানোর ঝামেলা এড়িয়ে একটি শহরে থেকে পুরো সময়টা কাটান। চাইলে সেখান থেকে কাছাকাছি জায়গায় একদিনের ভ্রমণ করা যায়। এতে সেই শহরের ছোট ছোট দিক, যেমন- প্রিয় কফিশপ বা অলিগলি চেনা হয়ে যাবে।
রান্নাঘরযুক্ত বাসস্থান নেওয়া
দেশের বাইরে গেলে এক-দুই বেলা নিজের হাতে রান্না করলে শান্তি আসে। স্থানীয় বাজার থেকে কেনাকাটা করাও আনন্দের অংশ হতে পারে। এতে খরচও কমে।
ধীর পথ বেছে নেওয়া
বিমানের বদলে ট্রেন, বাস বা অন্য ব্যবস্থা করতে পারে। কিংবা একদিন শুধু হাঁটা। ধীর যাত্রায় প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়, আর চাপও কমে।
ফাঁকা দিন
পরিকল্পনায় এমন দিন রাখুন যেখানে কিছুই নির্দিষ্ট করা নেই। ইচ্ছে হলে বিশ্রাম, আর ইচ্ছে হলে নতুন কিছু আবিষ্কার।
সাধারণ কাজ করা
স্থানীয়দের মতো বাজার করা, জন-পরিবহন ব্যবহার করলে স্থানীয় জীবনের আসল স্বাদ পাওয়া যায়।
ইন্দ্রিয়কে অনুসরণ
গাইডবুকের তালিকা নয়, নিজের মনকে অনুসরণ করতে হবে। একদিন যদি কেবল পার্কে বসে রোদ পোহাতে ইচ্ছে করে, তাই করতে হবে।
পরিকল্পনা ঢিলেঢালা
খুব বেশি বুকিং বা সময় নির্ধারণ করে ফেললে আনন্দ কমে যায়। বরং সময়ের সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিন।
মানুষের সঙ্গে কথা বলা
অল্প সময়ের আলাপও আনন্দদায়ক হতে পারে। রেস্তোরাঁর কর্মী, চালক, দোকানদার— সবার সঙ্গে ছোট ছোট আলাপ যাত্রাকে উষ্ণ করে তোলে।
প্রযুক্তি থেকে কিছুটা দূরে
মোবাইল ফোন বা সামাজিক মাধ্যমে কম সময় দিন। অথবা একদিন পুরোপুরি ফোন দূরে রেখে কেবল ভ্রমণ উপভোগ করে দেখুন।
সংকলনে- এ কে এম জুনাইদ, যুগ্ম-মহাসচিব- গ্লোবাল এভিয়েশন এন্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন















